ট্রাম্প ফিরে আসার কারনে বিশ্ব চলচ্চিত্রে ধাক্কাঃ

হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দ্বিতীয় মেয়াদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তার এই প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মনে করছেন। তার আগমন বৈশ্বিক রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

একইভাবে, চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, আমোদি-স্টাইলের ট্রাম্প শাসনামলে বিশ্বব্যাপী সিনেমাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারো জন্য এটা ভালো আবার কারো জন্য এটা নেতিবাচক। ট্রাম্পের প্রভাব কেমন হতে পারে এ নিয়ে ভাবছেন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি

একজন হলিউড রিপোর্টার স্বাধীন প্রযোজকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‌‌‘যখন আমি ট্রাম্প জয়ী হতে দেখলাম, তখন আমার ইচ্ছে করছিল মাথা নিচু করে কাঁদতে। এখন খুব সতর্কতার সাথে দেখতে হবে ফিল্মে কতটা পরিবর্তন আনা হয়।’

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি করা হয়েছে। প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ট্রাম্পের রক্ষনশীল অবস্থান হলিউডকে চীনা চলচ্চিত্রের বাজারে প্রবেশে বাধা দিতে পারে। যদিও চীনে কমছে মার্কিন কনটেন্টের চাহিদা। আমেরিকান চলচ্চিত্রগুলো চীনে প্রায় $797 মিলিয়ন আয় করেছে ২০২৪ সালে। যার মধ্যে $76 মিলিয়ন ইনকাম করেছে এই ব্লকবাস্টার সিনেমা (Venom: The Last Dance) ‘ভেনম: দ্য লাস্ট ডান্স’। ট্রাম্পের প্রচারণার প্রতিজ্ঞা ছিল চীনা জিনিসের উপর শুল্ক বাড়ানো। এই প্রতিশ্রুতি পুরন হলে হলিউডের উপার্জন এর উপর বাধা ফেলতে পারে। এবং এর প্রভাব পরতে পারে চীনা বাজারেও। তবে ট্রাম্প অনেক চীনা অধিবাসীদের কাছেও জনপ্রিয়। তারা ট্রাম্পকে কমরেড বলেও ডাকেন । তারা মনে করেন, উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য দুশ্চিন্তা নয় বরং আরও প্রচেষ্টা করা উচিৎ যাতে উদ্বেগের পরিবর্তে চলচ্চিত্র শিল্পের সুবিধা হয়।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে দুশ্চিন্তায় পড়েছে লাতিন দেশগুলোও । (G-7) ‘দ্য জিসেভেন’ এর CEO গুইলারমো ব্লাঙ্কো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, যৌথ উৎপাদন কমতে পারে সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতির কারণে। তবে তিনি ইহাকে একটি সুযোগ মনে করেন, যাতে আরও সাংস্কৃতিক এবং বাস্তবসম্মতভাবে বৈচিত্র্যময় গল্প তৈরি করা যায়।

মার্কিন রাজ্যে উৎপাদন প্রণোদনার কঠিন প্যাচওয়ার্কের কথা উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক প্রযোজক ‘লুনার পিকচার্স’-এর জিম রবিসন। ইন্ডাস্ট্রি ওয়াশিংটনের কাছ থেকে উদ্দীপনার প্রয়োজন হবে না বলে তিনি আশাও করেন। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কেন্টাকি এবং টেক্সাস ওকলাহোমা রাজ্যগুলো চলচ্চিত্র উন্নয়নের জন্য প্রণোদনা পাবে।

ট্রাম্প নিজেও একজন বিনোদনপ্রিয় মানুষ বলে অনেকে মনে করেন। তিনি কখনই চান না যে, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের অগ্রগতি রোধ হোক। বিশ্বজুড়ে হলিউডের প্রভাব বৃদ্ধিতে কাজ করবেন।

তবে ফ্রান্স জার্মানি, ইটালিসহ ইরোপিও কিছু দেশের ফিল্ম সংস্থা ও ব্যক্তিরা আমেরিকার সাথে সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখিন হতে পারে। কারণ দেশগুলোর অনেক নির্মাতা, তারকা, প্রযোজক ও বিভিন্ন উৎসব আয়োজকেরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। তারা নেতিবাচক প্রচারণাও চালান। বার্লিন ফিল্ম উৎসবের কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। এর আয়োজকেরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়াতে বয়কটের ডাক দিয়েছেন ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্লাটফর্ম টুইটার এর। এটা তো স্পষ্ট যে দ্রুত এ বিষয়ের সমস্যা কাটানোর ব্যাবস্থা না নিলে সমস্যায় পরতে পারে উৎসবটি।

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় ফিল্ম এর জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ট বন্ধু দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার অভিবাদন জানিয়েছে ট্রাম্পকে। এখন ভারতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় হলিউডের পর সিনেমার জন্য। ভারতের বাজার বিশ্ব চলচ্চিত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র ও তারকা উৎপাদন এবং বিকাশে যেমন বিশাল তেমনি ইনকামের পরিমাণের জন্য। তাই মার্কিন সরকার সবসময়ই ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ভালো রেখে চলেছে। এতে সন্দেহ নেই যে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে যাচ্ছে । বিভিন্ন উৎসবগুলোতে দুই দেশের সিনেমা এবং তারকাদের অংশগ্রহণও বাড়বে।

আরও পড়ুনঃ

আটকে গেল মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিক

অ্যাভেঞ্জার্স ভক্তদের জন্য ডেডপুলের চমক